এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ কক্সবাজার শহরে নামী-দামী ভাড়া বাসায় ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে রয়েছে বহু জঙ্গী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরে পুলিশের পক্ষে মাইকিং করায় লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে জঙ্গীদের ব্যাপারে ক্ষোভ। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অনেকে দীর্ঘদিন এদেশে বসবাসের সুবাদে নিজের নামে জমি কিনে গড়ে তুলেছে দালানকোঠা। ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়ে ইয়াবা, মানবপাচার, অস্ত্র ব্যবসা ও খুন-খারাবি চালিয়ে যাচ্ছে ওরা। ওসব ধনাঢ্য ব্যক্তি কোন না কোনভাবে জড়িত রয়েছে আরএসও জঙ্গীদের গ্রুপে। আরএসও জঙ্গীদের ওসব বাসা-বাড়িতে বার বার আশ্রয় নিয়ে জেএমবি-আরএসও জঙ্গীরা একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় অস্ত্র মজুদ, পেট্রোলবোমা তৈরি করে নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটিয়ে চলছে। শহরের বহু বাসা-বাড়িতে, আবাসিক প্লটে এবং বিভিন্ন মেস ও হোটেল-মোটেলে ছদ্মবেশে আত্মগোপনে রয়েছে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গীরা। তারা পরহেজগার লোকের বেশ ধরে চলাফেরা করলেও বিদেশী সংস্থার হয়ে যে কাজ করছে, তা সহজে বোঝা মুশকিল। ইতোপূর্বে শহরের টেকপাড়া এলাকার দুটি বাসা থেকে পৃথক অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ দুই জঙ্গীকে আটক ও বিপুল পরিমাণ পেট্রোলবোমা উদ্ধার করেছিল। এক শ্রেণীর ধান্ধাবাজ স্থানীয় নেতার বদৌলতে এরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে ফের ভদ্রলোকের লেবাস পরে যথানিয়মে ওসব বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এদের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে একশ্রেণীর ফায়দা হাসিলকারী নেতার। সম্পর্ক রয়েছে কতিপয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও উকিল-মুন্সির। জঙ্গী কর্মকা-ে আটক হলে ওসব ধান্ধাবাজ তদ্বিরের জন্য আগেভাগে হাজির হয়ে পড়ে থানায়। এদের কারণে পুলিশ স্বাধীনভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া, বাহারছড়া, নুনিয়াছড়া, বইল্যাপাড়া, আলীরজাহাল, পেশকারপাড়া, কলাতলী-লাইট হাউসপাড়া, হাসেমিয়া মাদ্রাসা এলাকা, চৌধুরীপাড়ার বহু ভাড়াবাসা, ধনাঢ্য রোহিঙ্গা বাড়িতে এবং আরএসও অর্থায়নে পরিচালিত মাদ্রাসা-এতিমখানায় বহু জঙ্গী ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশ প্রশাসন বর্তমানে কক্সবাজার জেলাজুড়ে শুরু করেছে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ অভিযান। কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ স্বাক্ষরিত প্রেরিত তথ্যে জানা গেছে, বাড়ির মালিক তাদের বাসা-বাড়ি-যেসব ভাড়াটিয়ার কাছে ভাড়া দিয়েছেন, ওই বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে হবে। এদের নাম, ঠিকানা, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র-জন্ম সনদ, মোবাইল নম্বর, পাসপোর্ট ইত্যাদি থানা কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত ‘ছক’ মোতাবেক পূরণ করে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে থানায় জমা দেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেছেন ওসি। মাইকিং ও পুলিশের তথ্য সংগ্রহ অভিযান দেখে জঙ্গী নেতা হাফেজ ছলাহুল ও মৌলভী আবু ছালেহ নিজেদের রক্ষা করতে কতিপয় নেতার পেছনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য পূরণ করে আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে থানায় জমা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুত্র দৈনিক জনকন্ঠ
পাঠকের মতামত